কাছিমের পিঠের মত পাথরটার উপর বসে শফিক ব্রহ্মপুত্রের ওপাড়ে আরো একটি সূর্যডোবা সন্ধ্যার সাক্ষী হচ্ছিলো । তার হাতে ২৯-তম বিসিএস ভাইভা পরীক্ষার চূড়ান্ত রেজাল্টশীট। হয়নি তার। হবে যে না এটা সে তখনই জানতো, সেই দেড় মাস আগে যখন সে ভাইভা বোর্ডের শীতাতপ কক্ষে বসেও ঘামছিলো, তখনই। না, ছাত্র সে খারাপ কোনকালেই ছিলো না। এসএসসি এইচএসসিতে ইংরেজিতে যাকে বলে ‘মার্ভেলাস রেজাল্ট’- তাই করে ভর্তি হয়েছিলো বাকৃবিতে। তারপর অনার্স শেষে বেশ প্রস্তুতি নিয়েই সে বসেছিলো বিসিএস পরীক্ষায়। প্রিলি থেকে ভাইভা পর্যন্ত সেই দীর্ঘ ক্লান্তিকর যাত্রা শেষের ফলাফল কি? লবডঙ্কা।
- ব্যাদা-া-া-া-াম খাইবেন ব্যাদা-া-া-া-ম। পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়া বাদাম ওয়ালার হাঁক শুনে শফিকের চিন্তার জাল ছিন্ন হয়। সে একটু জোরে ডাক দেয়-
- এ্যাই বাদাম, কাম হিয়ার।
- বাদাম লাগবো মামা?
- ইয়েস, গিভ মি ফাইভ হানড্রেড গ্রাম বাদাম।
- কি কন বুঝলাম না, বাংলায় কন।
- এ্যাই ব্যাটা, ইংরেজী জানস না আবার ব্যবসা করতে আইছস? তর সাহস তো কম না! জানস না, সব বেইন্যার বড় বেইন্যা হইলো ইংরেজ।
- অত জাইন্যা কাম নাই মামা। বাদাম বেইচ্চা ভাত খাই, ইংরেজী দিয়া আমার কি কাম?
- দে , পাঁচ টাকার বাদাম দে।
বাদাম খেতে খেতে ভাবে শফিক, সেদিন ভাইভা বোর্ডে সে এই বাদামওয়ালার মতো সাহস করে বলতে পারেনি। বাংলা, গণিত, সাধারণ জ্ঞান সব কিছুতেই সে ভালো, কেবল এই ইংরেজীতেই তার সমস্যা। তাও পড়তে বা লিখতে কোন সমস্যা হয় না তার, কেবল বলতে গেলেই গলার কাছে কি যেন আটকে আসে, জিভ শুকিয়ে মরুভূমি হয়ে যায়। আর তারও যেমন কপাল। ভাইভা বোর্ডে ঢুকতেই পরীক্ষক চশমার উপর দিয়ে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলেন-
- প্লিজ ইনট্রোডিউস ইওরসেলফ।
কোন মতে মুখস্ত করে আসা প্যারাটা উগরে দেয় শফিক।
- হোয়াট ডু ইউ নো বাউট আওয়ার লিবারেশান ওয়ার?
- হাউ ক্যান উই ইনক্রিয়েজ আওয়ার জিডিপি?
- প্লিজ স্পেল কামোফ্লাজ, সাবোটাজ, ডাইরিয়া। ব্লা ব্লা ব্লা ব্লা।
জড়ানো জিভে আমতা আমতা করে উত্তর দিয়ে যাচ্ছিলো শফিক। নার্ভাসনেসের কারনে জানা উত্তরগুলোও ভুল হয়ে যাচ্ছিলো। অনেক সুন্দর করে সাজানো কথাগুলোর যথাযথ ইংরেজী না জানার কারনে বলতেও পারছিলো না।
- আচ্ছা, ট্রান্সলেশান কর, ‘আমি ইংরেজীতে মোটেও ভালো নই’।
অপমানে মাথা নিঁচু করে সেদিন বসে ছিলো শফিক। আজকের বাদামওয়ালাটির মতো বলতে পারে নি- স্যার, আমার চাকরি হলে পোস্টিং হবে বাংলাদেশের কোন উপজেলায়, কথা বলতে হবে গ্রামের কৃষকদের কাছে তাদের ভাষায়, ইংলিশ স্পিকিং এ আমার কাম কি?
মাথা নিঁচু করে বেরিয়ে আসতে আসতে শফিক সে দিনই বুঝেছিলো, বিদ্যায় বুদ্ধিতে বাঙ্গালী যতই বড় হোক, বেনিয়ার ভাষা না জানলে তার মুক্তি নাই। চাকরিটা যে তার হবে না এটা সে তখনই বুঝে গিয়েছিলো। আর তাই আজ সে কাছিমের পিঠের মত পাথরটার উপর বসে ব্রহ্মপুত্রের ওপাড়ে আরো একটি সূর্যডোবা সন্ধ্যার সাক্ষী হচ্ছিলো আর ভাবছিলোঃ
কবি আব্দুল হাকিম সাহেব, তুমি বলছিলা যে সবে বঙ্গেতে জন্মে হিংসে বঙ্গবাণী, সেসব কাহার জন্ম নির্ণয় ন জানি। আজকে এসে তুমি বলে যাও এই বাঙ্গালি কার জন্ম? কার? কার?
০১ ডিসেম্বর - ২০১২
গল্প/কবিতা:
১২ টি
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
-
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
বিজ্ঞপ্তি
“ডিসেম্বর ২০২৪” সংখ্যার জন্য গল্প/কবিতা প্রদানের সময় শেষ। আপনাদের পাঠানো গল্প/কবিতা গুলো রিভিউ হচ্ছে। ১ ডিসেম্বর, ২০২৪ থেকে গল্প/কবিতা গুলো ভোটের জন্য উন্মুক্ত করা হবে এবং আগামি সংখ্যার বিষয় জানিয়ে দেয়া হবে।
প্রতিযোগিতার নিয়মাবলী